ব্যস্ত শহর ঢাকায় একদিনের ছুটি পেলে ভ্রমনপিয়াসুরা চিন্তায় পরে যান কিভাবে কোথাও ঘুরে আসা যায়। ঢাকার মাঝেই একদিনেই ঘুরে আসার জন্য কয়েকটি জায়গার কথা তুলে ধরা হল।

হাতিরঝিল

এ এলাকাটি তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং শ্রীবৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

ভিন্নধর্মী অবকাঠামো আর ঝিলের সৌন্দর্যের জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকার মাঝে আকর্ষনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে হাতিরঝিল। নতুন সংযোজন হিসেবে আলোকসজ্জা আর পানির ফোয়ারা এর রুপ বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুন। এ রঙ বেরঙের ফোয়ারার সাথে তালে তালে বাজতে থাকে মিউজিক। ফোয়ারার এ নাচগান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায় আর চলতে থাকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

যোগাযোগের মাধ্যমেও হাতিরঝিলে এসেছে নতুন চমক হিসেবে ওয়াটার ট্যাক্রি। পাওয়ারফুল ইঞ্জিনে চালিত বোটগুলি চলার সময় ভিজিয়ে দেয় দুই পাড়। এছারাও রয়েছে সুবিন্যস্ত ও আলোকজ্জল সড়ক আর মুক্ত হাওয়ার ছড়াছড়ি। সারাদিনের ক্লান্তি আর মন ভাল করতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভির করে হাতিরঝিলে।

সোনারগাঁও (পানাম নগর)

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলাটি ছিল বাংলার মুসলিম শাসকদের অধিনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই আকর্ষণীয় সোনারগাঁও। এখানে রয়েছে আম, লিচু, পাম, নারিকেল, মেহগনি ও গুবাকতরুর সারির শ্যামল, স্নিগ্ধ, হৃদয় জুড়ানো নিরিবিলি পরিবেশের ঐতিহ্য নামের একটি বিনোদন স্পট। নির্দিষ্ট ফিয়ের মাধ্যমে এই স্পটগুলো ভারা পাওয়া যায় পিকনিকের জন্য।

সোনারগাঁয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর পানাম নগর। বার ভূঁইয়াদের ইতিহাস বিজড়িত শত বছরের পুরনো অনেক ভবন দিয়ে গঠিত এই ২০ বর্গকিলোমিটারের পানাম নগর। সরকের দুপাশে সারি সারি আবাসিক পরিত্যক্ত শতবর্ষি এ বাড়িগুলো দর্শনার্থিদের মুগ্ধ করে দেয়। পানাম নগরের পাশেই রয়েছে কারুশিল্প গ্রামে বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে বিভিন্ন ঘরে কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা। বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শনী ও বিক্রি হচ্ছে।

সোনারগাঁও যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে বাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। মোগড়াপারা বাসষ্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি:মি: অভ্যন্তরে সোনারগাঁ যাদুঘরের অবস্থান এবং এর সাথেই রয়েছে পানাম নগরী। রিকশা বা অটোরিক্সা যোগে যেতে হবে সোনারগাঁ জাদুঘরে।

আহসান মঞ্জিল

পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদির কোল ঘেষে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল । দৃস্টি নন্দন এই গোলাপি রঙের দালানটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নওয়াব পরিবারের বাসভবন ও সদর কাচারি ছিল। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৭২ সালে প্রাসাদটি নির্মান করান। নতুন ভবন নির্মানের পরে তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানউল্লার নামানুসারে এর নামকরন করেন।আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হলেও সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি।

ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হলো আহসান মঞ্জিল। নবাব পরিবারের স্মৃতি বিজরিত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর। বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের মূল প্রাসাদটি গ্যালারী আকারে রুপান্তর করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মোট ২৩টি গ্যালারি। ১৯০৪ সালে তোলা ফ্রিতজাকাপের আলোকচিত্র অনুযায়ী বিভিন্ন কক্ষ ও গ্যালারি গুলো সাজানো হয়েছে। এসব গ্যালারিতে সাজানোর জন্য আছে নবাবি আমলের নানাবিধ জিনিসপত্র যার সংখ্যা চার হাজার সাতাত্তরটি।এখানে ঘুরতে এসে একজন দর্শক চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি ঐতিহাসিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

আহসান মঞ্জিল গ্রীষ্মকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০.৩০মিনিট থেকে বিকেল ৫.৩০মিনিট এবং শীতকালে সকাল ৯.৩০মিনিট থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার জাদুঘরটি সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।

লালবাগ কেল্লা

লালবাগের কেল্লা বা কেল্লা আওরঙ্গবাদ নামে পরিচিত ১৭  শতকে নির্মিত এ অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ স্থাপনাটি  ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ এটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ১৬৭৮ সালে, পরবর্তিতে তার উত্তরসুরী, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করলেও তা শেষ করেননি। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটলে শায়েস্তা খাঁ  এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

দুর্গটি তিনটি ভবন স্থাপনার সমন্বয় ( মসজিদ ,পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম) ,সাথে দুটি বিশাল তোরণ ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মজবুত দুর্গ প্রাচীর এছাড়াও বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক উৎখননে অন্যান্য অবকাঠামোর অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে ।

দুর্গটির দক্ষিণস্থ দুর্গ প্রাচীরের উত্তরে ছিল কয়েকটি ভবন ,আস্তাবল , প্রশাসনিক ভবন,  এবং পশ্চিম অংশে জলাধার ও ফোয়ারা সহ একটি সুন্দর ছাদ-বাগান। মসজিদটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অর্থাৎ দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম-পূর্বে ছিল আবাসিক অংশ। এখানে ছিল ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ। পূর্বে রয়েছে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা , পশ্চিমে মসজিদটি এবং পরী বিবির সমাধি দুটোর মাঝখানে – এক লাইনে , কিন্তু সমান দূরত্বে নয় । নির্দিষ্ট ব্যবধানে কয়েকটি ফোয়ারা সহ একটি পানির নালা তিনটি ভবনকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিনে সংযুক্ত করেছে । শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ও দরবার হল বর্তমানে লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।

 

মৈনট ঘাট(মিনি কক্সবাজার)

ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা একটি রাস্তার শেষ মাথায় রয়েছে দোহারের মৈনট ঘাটে। সড়কের দুই পাশের চর দেখে অনেকেরই সমুদ্রের কোনো বেলাভূমি ভেবে ভুল হতে পারে। দোহার উপজেলায় পদ্মাপাড়ের একটি ঘাট হল মৈনট ঘাট।

মিনি কক্সবাজার নামে মৈনট ঘাট এখন ঢাকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।  মূলত ঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর আর সামনে বিস্তীর্ণ পদ্মা এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারন। মৈনট ঘাট থেকে পদ্মায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিড বোট। তাছাড়া এ মৌসুমে প্রচুর রংবেরংয়ের পালের নৌকাও দেখা যায় মৈনট ঘাটে। এখান থেকে পদ্মা নদীতে নৌকায় ঘুরেও বেড়ানো যায় পাড় ধরে। আড়াইশ থেকে ৮শ’ টাকা ঘণ্টায় এসব ইঞ্জিন নৌকায় চার থেকে ২০/২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যায়।

এখানে রয়েছে পদ্মার মাছ কেনারও সুযোগ।

মৈনট ঘাট থেকে পদ্মায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিড বোট। আট জনের চড়ার উপযোগী একটি বোটের ভাড়া ত্রিশ মিটিটের জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া ছোট বড় নানান আকারের ইঞ্জিন নৌকাও আছে। আড়াইশ থেকে ৮শ’ টাকা ঘণ্টায় এসব ইঞ্জিন নৌকায় চার থেকে ২০/২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যায়। নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা হওয়া জেলে নৌকা থেকে মাছও কিনতে পারেন। তবে পদ্মার সেই টাটকা মাছের স্বাদ নিতে হলে দাম বেশ কিছুটা বেশিই গুনতে হবে।

দিনের দ্বিতীয়ভাগটাই মৈনট ঘাট ও পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সর্বত্তম। তাই সূর্যাস্ত না দেখে ফেরাটা বোকামি।

তবে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দুতিন ঘণ্টার জন্য ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে মৈনট ঘাটের কোলাহল ছেড়ে একটু দূর থেকে ঘুরে আসাই ভালো।

মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে পদ্মার মাছও কেনার সুযোগ আছে। নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা হওয়া জেলে নৌকা থেকে মাছও কিনতে পারেন। তবে পদ্মার সেই টাটকা মাছের স্বাদ নিতে হলে দাম বেশ কিছুটা বেশিই গুনতে হবে।

মৈনট ঘাট ও পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দিনের দ্বিতীয়ভাগই ভালো। সেখানে সূর্যাস্ত না দেখে ফেরা উচিৎ হবে না। দিনের প্রথম ভাগটা কাজে লাগাতে পারেন নবাবগঞ্জের কলাকোপার ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ, প্রাচীন প্রাসাদ, এন হাউজ, জগবন্ধু সাহা হাউজ এবং খেলারাম দাতার বাড়ি দেখে। সেই সাথে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন বান্দুরার জপমালা রাণীর গির্জাও।

গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার থেকে জনপ্রতি ৯০ টাকা ভাড়ায় দোহারের মৈনট ঘাটে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে যমুনা পরিবহনের। যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ফেরার সর্বশেষ ট্রিপ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।তবে মৈনট ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিজস্ব গাড়ি কিংবা কয়েকজন মিলে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে যাওয়া ভালো।

 

2 Comments

  1. বাহ ! বেশ ভাল তথ্য তো! সব কিছু জানলেও এই মৈনট ঘাট (মিনি কক্সবাজার) এর কথা জানা ছিল না। ধন্যবাদ টাইম বাংলা। এরকম আরো ভাল ভাল খবর ও তথ্য চাই 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published.

*